জোড়কলম পদ্ধতি অনুসরণ করে একই গাছে আলু ও টমেটো ফলনে সফলতা এসেছে।
একই গাছে মাটির নিচে ফলবে গোল আলু আর মাটির ওপরে লতানো গাছের ডালে ঝুলবে টমেটো। বাংলাদেশে জোড়কলম বা গ্রাফটিং পদ্ধতি অনুসরণ করে এমন আবাদে সফলতা এসেছে। বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন কৃষি বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জার্মাপ্লাজম সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. এ এম ফারুক। জোড়কলম পদ্ধতিতে একই গাছে দুই সবজি টমেটো আর গোল আলু আবাদের এ প্রযুক্তিকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘টমালু’।
ড. এ এম ফারুক জানান, মূলত গোল আলু ও টমেটো একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ গবেষণায় সফলতা এসেছে। ‘টমালু’ গাছে রুট স্টক হিসেবে আলুর চারা আর সায়ন হিসেবে টমেটোর চারা ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দুটি চারার বয়সই সমান হতে হবে। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে সোলানেসি গোত্রের ডায়ামন্ট ও কার্ডিনাল জাতের আলুর সঙ্গে বারি টমেটো-১৫ ও বারি টমেটো-১৬ জাতের টমেটোর চারাগাছ জোড়া দিয়ে এ পরীক্ষামূলক চাষে তিনি সাফল্য পান। সরকারি সহযোগিতা পেলে প্রযুক্তিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে আগামী বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকের মাঠে নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি।
চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে ড. ফারুক জানান, প্রথমে আলাদা জায়গায় টমেটো ও আলুর চারা তৈরি করে নিতে হবে। চারা গাছের বয়স ২৫-৩০ দিন এবং উচ্চতা ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার হওয়ার পর আলুগাছের চারার সঙ্গে টমেটোর চারা ক্লেফ্ট
গ্রাফটিং বা ফাটল কলমের মাধ্যমে জোড়া লাগিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলুগাছের চারার মাথা ও টমেটো চারার গোড়ার অংশ কেটে নিতে হবে। গাছ জোড়া লাগলে পলিথিন খুলে ফেলতে হবে।
গবেষক ফারুক জানান, জোড়া লাগানোর এ প্রক্রিয়ায় তিনি শতভাগ সফলতা পেয়েছেন। আর পরিচর্যাতেও কোনো বাড়তি ঝামেলা নেই। অনেকটা স্বাভাবিক সবজি পরিচর্যার মতোই। তবে আরো ভালো ফলন পেতে পরিচর্যার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানান, গাছ তৈরির সময় জাতের সমন্বয় ভালোভাবে করতে পারলে দুটি সবজিরই ভালো ফলন পাওয়া যাবে। মাটিতে পর্যাপ্ত জৈব পদার্থ এবং আর্দ্রতা ভালো থাকলে ফলন বেশ ভালো হবে। শৌখিন ব্যক্তিরা বাড়ির ছাদেও এ পদ্ধতিতে টমালুর আবাদ করতে পারেন। চলতি বছরে আরো উন্নত কয়েক জাতের আলু ও টমেটো নিয়ে তিনি গবেষণা করবেন বলে জানান।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অধ্যয়ন শেষে ১৯৭২ সালে একই প্রতিষ্ঠানে উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. এ এম ফারুক। তিনি ২০০১-০৮ সাল পর্যন্ত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে অবসর গ্রহণ শেষে আইইউবিএটিতে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
পাঠকের মতামত: